ভয়াবহ সেশনজটে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় এবার স্বেচ্ছায় ‘ফাঁসি’ চেয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) বৈষম্যবিরোধী নার্সিং অনুষদের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রামেবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের সামনে গলায় দড়ি ঝুলিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি থেকে তারা এ ফাঁসি চান। সকাল ১০টায় রাজশাহী নার্সিং কলেজে চত্বর থেকে কর্মসূচি শুরু হয়।
অবস্থান কর্মসূচির একপর্যায়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য দপ্তরটি বন্ধ ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বলেন, ‘যে ভার্সিটি কোনো কাজের না, সেটা খোলা রাখার দরকার নাই। এখানে এসে দেখছি সব কর্মকর্তা-কর্মচারী পালিয়েছে। বুধবার আমাদেরকে জেলা প্রশাসকের অফিসে নিয়ে গিয়ে অভিনয় করেছে। তারা মুনাফিকি করেছে, তাদের কথা তারা রাখেনি। পরীক্ষা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে পালিয়েছে, তারা বাইরে গিয়ে নিজেদের মধ্যে মিটিং করছে, ষড়যন্ত্র করছে। তারাই সেশনজট ও পরীক্ষা বানচাল করেছে। তারা অফিসে না আসলে তাদের রাখার দরকার নাই। নতুন নিয়োগ দেয়া হোক।’ শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে। আমরা বাসায় জীবিত অবস্থায় চেহারা দেখাতে পারব না। হয় আমাদের দাবি মেনে নিয়ে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে, অন্যথায় আমাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বাসায় মরদেহ পাঠাতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- স্থগিত হওয়া ২০১৯-২০ সেশনের বিএসসি ইন নার্সিং কোর্সের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে যে কোনো কর্মকর্তাকে পরীক্ষা পরিচালনার জন্য নির্বাহী দায়িত্ব প্রদান, পরীক্ষা কমিটির সাথে সমন্বয় করে অভ্যন্তরীন ব্যবস্থায় পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ফলাফল প্রকাশ করা, আগামী পহেলা অক্টোবর থেকে শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে ইন্টার্নশীপ শুরু নিশ্চিত করা, বেসরকারি কলেজসমূহে পরীক্ষার ফরম ফিলাপের অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ বন্ধ করা, রামেবিতে পরীক্ষার রেজাল্ট চ্যালেঞ্জের ফি প্রতি সাবজেক্ট ৫ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ১ হাজার টাকা করা এবং রাজশাহীস্থ বেসরকারি নার্সিং কলেজের বিএসসি শিক্ষার্থীদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা।
কর্মসূচি থেকে সেশনজট সৃষ্টিকারী এবং পরীক্ষা বানচালের ষড়যন্ত্রকারী উল্লেখ করে রামেবির ১২ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান শিক্ষার্থীরা। এ ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারী আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এবং দলীয় স্বার্থে রামেবির বিরুদ্ধেই বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করেন বলেও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। এসময় দুপুর একটার ভেতর ওই ১২ কর্মকর্তা কর্মচারীকে সশরীরে এসে অবস্থান পরিষ্কার করার সুযোগ দেন শিক্ষার্থীরা। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেউ আসেননি।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রায়হান আলী বলেন, ‘রামেবি অধিভুক্ত ২৩ নার্সিং কলেজের প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী বৈষম্যের শিকার। রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলা থেকে আমরা রাজশাহী এসে আন্দোলন করছি। দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা বাসায় ফিরবো না। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি চলবে। অন্যথায় ফাঁসি দিয়ে লাশ বাসায় পাঠাতে হবে!’
পরবর্তীতে দুপুর দেড়টায় ফাঁসির দড়ি গলায় ঝুলিয়েই মিছিল নিয়ে বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীরের কাছে গিয়ে স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। এসময় বিভাগীয় কমিশনার শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘তোমাদের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত। কাউকে পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়ানোর চেষ্টা করব। আমরা কথা বলব।’ তৎক্ষণাৎ অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন ও আইসিটি) মোহাম্মদ কবির উদ্দিনকে বিষয়টি দেখতে নির্দেশ দেন ড. হুমায়ুন কবীর। তিনিও শিক্ষার্থীদের সামনে কাজ শুরু করেন। এরপর বিকাল ৪টায় শিক্ষার্থীরা এদিনের মতো কর্মসূচি সমাপ্ত করেন।